Ticker

6/recent/ticker-posts

ইসলামী শিল্পকলার স্বরূপ ও সৌন্দর্য: আধ্যাত্মিকতা ও নান্দনিকতার এক অনন্য সুধা

 ইসলামী সভ্যতার সাধারণ রূপ হলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এবং তা ইসলামী মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ইসলামী সভ্যতা কখনো মানুষ ও প্রাণীর ছবি ও চিত্রকে উত্সাহিত করেনি। বিশেষত যখন তা মূর্তিমান হয়। ইসলামী সভ্যতা মূর্তি মুক্ত সভ্যতা। আর এটাই ইসলামের তওহীদের মতবাদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অন্যদিকে মূর্তিমান শিল্পকলা ও সভ্যতা পৌত্তলিকতার সাথে বিভিন্নভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে ইসলাম মূর্তিমান শিল্পকলাকে গ্রহণ করেনি, তা থেকে নিরুত্সাহিত করেছে।


ইসলামী শিল্প-সভ্যতা স্বতন্ত্র রীতি-নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে তা শিল্পের এমন বিকল্প ধারা তৈরি করেছে যা পৃথিবীর যাবতীয় শিল্পকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। যেমন ইসলামী সভ্যতায় গ্রাফিক ও কারুকার্য শিল্প অত্যন্ত উন্নতি লাভ করে এবং তাতে অতি মনোহার শিল্প-রসদ তৈরি হয়। মুসলিম শিল্পীর শিল্পরুচি, তার হাত ও তুলির ছোঁয়া সে অনিন্দ্য শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছে তা শতাব্দী থেকে সহস্রাব্দ পর্যন্ত মানুষের জন্য বিস্ময় হয়ে আছে। এমন শিল্পকর্ম মুসলিম সমাজের মসজিদ, অট্টালিকা, বাড়ি-ঘর, বই-পুস্তক, পবিত্র কোরআনের অনুলিপি ইত্যাদিতে পরিলক্ষিত হয়। তা দেখা যায় দেয়াল, ছাদ, দরজা-জানালা ও ঘরের মেঝেতে। এমন কি বাড়ির ব্যবহার্য জিনিসে যেমন তৈজসপত্রে, কাপড়-চোপড়ে, বিছানায়; যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহূত ঢাল-তলোয়ার ও খঞ্জরেও।


মুসলিম শিল্পীরা তাদের শিল্পকর্মে নানা ধরনের উপাদানের বহুমুখী ব্যবহার করেছে। তারা যেমন ব্যবহার করেছে পাথর, গ্রেনাইট, সুরমা, মার্বেল পাথর, কাঠ, চিনা মাটি, চামড়া, আয়না, পাতা, লোহা, পিতল তেমনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ধরনের রং ও প্রাকৃতিক উপাদান। তারা এগুলোকে এক রৈখিক ব্যবহারে সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং একেকটি উপাদানকে নানাভাবে, নানা আঙ্গিকে ব্যবহার করেছে। বিপুল বৈচিত্র ছিল তাদের শিল্প চিন্তায়। ইসলামী শিল্পকলার অন্যতম দিক ক্যালিগ্রাফি, এটা প্রধানত আরবি বর্ণমালা ভিত্তিক। ক্যালিগ্রাফির জগতে প্রবেশ করলে দেখা যাবে আরবি লিপির বিপুল বৈচিত্রময় ব্যবহার। যেমন সুলুস নুসুখ, খততে রোকআ, ফারসি দেওয়ানি, কুফি ইত্যাদি। আরবি লিপির প্রতিটি ধারায় ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরা অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। তারা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখে গেছেন অতি চমত্কার শিল্পকর্ম।


সব চেয়ে বেশি ক্যালিগ্রাফি ও কারুকার্য শিল্প দেখা যায় কোরআনের অনুলিপি ও মসজিদের অলঙ্করণে। পৃথিবীর বেশির ভাগ মসজিদে কোনো না কোনো শিল্পকর্ম আপনার চোখে পড়বে। পৃথিবীর প্রধান প্রধান মসজিদে দেখা মিলবে চোখধাঁধানো শিল্পকর্ম। যেমন মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী, বায়তুল মুকাদ্দাস, উমাইয়া মসজিদ, তুরস্কের সুলতান আহমদ ও সুলাইমানিয়া মসজিদ, কায়রোর সুলতান হাসান ও মুহাম্মদ মসজিদসহ মুসলিম বিশ্বের আইকনিক মসজিদগুলো।


ইসলামী শিল্পকলায় সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হয়েছে স্থাপত্য শিল্প। সভ্যতার ইতিহাস লেখকরা বলেছেন, স্থাপত্য শিল্পে ইসলামী শিল্পকলার সর্বাধিক প্রতিফলন ঘটেছে। বিশ্ব সভ্যতার সর্বোচ্চ নির্দেশনগুলোর একটি হলো ভারতের তাজমহল, যা পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য হিসেবে স্বীকৃত। এর শিল্প ও কারুকাজ এতটাই উন্নত যে, পৃথিবীর যে কোনো শিল্পবোদ্ধা এর উচ্চ প্রশংসা করতে বাধ্য। তাজমহল যে দেখেছে সেই মুগ্ধ হয়েছে।


এভাবেই ছবি তৈরী ও মূর্তি চিত্র কিংবা মূর্তিমান চিত্র অঙ্কন নিষিদ্ধ করার ফলে শিল্প জগতে অনেক নতুন শিল্পের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে যা ইসলামী বিশ্বকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দান করেছে এবং অনন্য আদর্শ দান করেছে।

Post a Comment

0 Comments